প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি খাতে বহুমুখী প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে পোশাক খাত।
চীন, ইউরোপ ও আমেরিকানির্ভর আমদানি-রপ্তানি কমেছে। চীন থেকে এক মাসের ব্যবধানেই পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ২৬ শতাংশ। বন্ধের পথে চীন, ইউরোপ ও আমেরিকায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি।
করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এরইমধ্যে পোশাক খাতে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি রপ্তানি অর্ডার বাতিল হয়েছে।
এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিষয়টি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনিটরিং করছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে একটি ন্যাশনাল কমিটি গঠন করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। করোনার কারণে রপ্তানি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। শিল্প রক্ষায় সব ধরনের নীতিগত সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে সরকার। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এরইমধ্যেই তৎপর রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতিতে এরই মধ্যে করোনা মহামারির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই সংকট যত দীর্ঘায়িত হবে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতি এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই অর্থনীতিতে এর প্রভাব মোকাবিলায় সরকারকে প্রয়োজনীয় পূর্ব প্রস্তুতিসহ জনসচেতনতা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে জরুরি অবস্থায় জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সুতরাং, বিষয়টি সরকার কীভাবে নিচ্ছে এবং মোকাবিলা করার সক্ষমতার ওপরই অর্থনীতির ধাক্কা সামলানোর বিষয়টি নির্ভর করছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দুইজন রোগীর মৃতু্যর পর থেকে সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে অর্থনীতির প্রধান দুই খাত রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি রয়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে দলে দলে মানুষের ফিরে আসা ও প্রবাসীদের বেশিরভাগ কাজে যোগ দিতে না পারায় শিগগিরই রেমিট্যান্স আহরণে বড় ধরনের ঝুঁকি আসন্ন। অন্যদিকে রপ্তানি অর্ডারও বাতিল করছে ক্রেতা দেশগুলো। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় ইউরোপের ২৮টি দেশে। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হচ্ছে ইতালি। দেশটির সঙ্গে বলতে গেলে এখন বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সর্বশেষ দেশটির সব অঙ্গরাজ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। লকডাউন করা হয়েছে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। পোশাকের পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলোতে চামড়া, হিমায়িত মাছ, পস্নাস্টিক পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং শাক-সবজি রপ্তানি বন্ধ হওয়ার পথে। এসব খাত থেকে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে।
এদিকে চামড়াশিল্পের উদ্যোক্তারা এরইমধ্যে তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পস্নাস্টিক পণ্যের উদ্যোক্তারা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আগামী বাজেটে বিশেষ কর ছাড় ও প্রণোদনা দাবি করেছেন। এ ছাড়া শাক-সবজি রপ্তানিকারকরা ইউরোপে বিশেষ কার্গো বিমান চাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের প্রভাবে এসব খাতে দীর্ঘমেয়াদে সংকটের কথা বলছেন উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া পোশাকের নতুন বাজার খ্যাত লাতিন আমেরিকা, জাপান ও প্রতিবেশী ভারতের বাজারেও সুখবর নেই। ফলে এ অবস্থায় দেশের রপ্তানি খাত বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাণঘাতী করোনা বৈশ্বিক অর্থনীতিসহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এরইমধ্যে প্রভাব ফেলেছে। আমি এটাকে বলবো থ্রি টি। বিশেষ করে ব্যবসাবাণিজ্য, রেমিট্যান্স, আমদানি ও রপ্তানি ক্ষেত্রে, ট্রান্সপোর্ট খাত ও টু্যরিজম খাতে প্রভাব পড়েছে। এ কারণেই করোনা আমাদের অর্থনীতির জন্য হতাশার ইঙ্গিত দিচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজার চড়া। সরকার এ ক্ষেত্রে সরবরাহ বাড়িয়ে বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পাশাপাশি সার্বিক অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সরকার ঋণ সহায়তা দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সামগ্রিক আমদানির প্রায় ২৬ ভাগ আসে চীন থেকে। আমাদের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য কাপড়, সুতা তথা কাঁচামালের শতকরা ৬৬ ভাগ আসে চীন থেকে। এর মানে, এখানেও আমদানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া যেসব দেশে আমরা তৈরি পোশাক রপ্তানি করি, সেসব দেশও করোনায় আক্রান্ত। ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড ও ইউরোপের উলেস্নখযোগ্য দেশ যেখানে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের বড় বাজার রয়ে