করোনাকালে রুপসী বাংলার মহৎ যারা
লাবিব আব্দুল্লাহ – আমার প্রিয় শহর ময়মনসিংহ৷ করোনাভাইরাসে চলছে লকডাউন৷ বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত বনী আদম ৷ অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে মানুষের বেঁচে থাকার প্রান্তকর প্রচেষ্টা৷ তৃতীয় বিশ্বের দেশ বাংলাদেশ৷ এক কোটি বিশ লাখ প্রবাসী আমাদের৷ রেমিটেন্স সৈনিক ৷

উন্নয়ণের আরেক চালিকা শক্তি গার্মেন্টস খাত৷ লাখ লাখ বস্ত্রবালিকা বা বালক আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য স্বল্প মজুরিতে শ্রম বিক্রি করে৷ আমরা এইসব মানুষের টাকায় বড়াই করি৷ দাম্ভিকতা দেখাই৷ উন্নয়ণের কথা বলে লুট তরাজও করি৷ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখি৷ হত্যা গুম খুনের বাজার গরম রাখি৷ বাচালের মতো বকবক করি৷ সামাণ্য ক্ষমতা পেলেই বাপের বয়সি বুড়ো সম্মানিত সিনিয়র নাগরিকদের কান ধরে উঠবস করাই৷ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি পরে ঢাল নাই তলোয়ার নেই নিধিরাম সরদারের ভূমিকায় থেকে বাহাদুরি করি৷ করোনার কিট কোথায়? পর্যাপ্ত পরীক্ষা কি হচ্ছে? জ্বর সর্দি কাশিতে মরছে বাঙালী চৈত্র মাসে৷ অসভ্যরা কবর দিতে নিষেধ করে গোরস্থানে৷ কোনো কোনো দাজ্জালের চেলা লাশ পোড়াতে প্রস্তাব করে মিডিয়ায়৷ স্বাস্থ্য খাত কতটা অসুস্থ্য তা তো সবাই দেখছে৷ যাক তবুও আমাদের দেশ৷ আমাদেরই অক্ষমতা৷ আমরা ছাল নাই কুত্তার বাঘা নামের ভূমিকা নিয়ে কথা বলি৷ দশ লাখ মানুষ আক্রান্ত দেশে দেশে৷ ৫২ হাজার করোনার খাবারে পরিনত৷ এই ভাইরাস ধর্ম চেনে না৷ কর্ম চেনে না৷ সীমানা চেনে না৷
দেশ মহাদেশে হামলা তার৷ এটমবোমা, আনবিক বোমা পারমানবিক বোমা তো কাজে দেবে না এই বেঁচে থাকার সংগ্রামে৷ যারা করোনার বিরুদ্ধে ফাইট বা লড়াইয়ের কথা বলেন তারা সেই নিধিরাম সরদার সাহেব৷
আমাদের দেশের নানা বিভাগের সরকারি চাকুরীজীবী আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ এই করোনা সংকটে তাদের সহযোগিতা করতে হবে৷ তাদের প্রতি ভাৱোবাসা প্রকাশ করা উচিৎ৷ তাদেরও জীবন রয়েছে৷ রয়েছে পরিবার৷
জীবনের মায়া রয়েছে সবারই৷ আমাদের অক্ষমতার ভেতরে আগামী দিনে সক্ষমতার স্বপ্ন দেখতে হবে৷ আশাবাদী হতে হবে৷ সরকারী উদ্যোগ আয়োজনের সঙ্গে মাঠে ময়দানে মানুষের প্রতি ভালোবাসায় বহু লোক ব্যক্তিগতভাবে, সাংগঠিকভাবে সেবামূলক কাজ করছেন দরদি মন নিয়ে৷ ডাল চাল পিয়াজ রশুন ও পরিবারের জুররি পণ্য নিয়ে হাজির হচ্ছেন ঘরে ঘরে৷ কেউ প্রকাশ্য কেউ গোপনে৷ কেউ ফটোসেশন করে কেউ ফটোহীন৷ দেশজুড়ে এই ভালোবাসার দ়শ্যগুলো আশা সঞ্চার করে আমাদেরকে৷
ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ মানুষের পাশে নির্জানালয়ে৷
কিছু সম্মানিত মানুষ নিজের অভাবের কথা বলেন না৷ বলতে লজ্জাবোধ করেন৷ কেউ লকডাউনে কর্মহীন টাকা পয়সাহীন অবস্থায় বাসায় বন্দি হয়ে একাকী কান্না করছেন নীরবে৷ কেউ অভাবের তাড়নায় ঘর থেকে বের হতে বাধ্য হচ্ছেন৷ রাস্তায় এক প্যাকেট রান্না করা খাবারের আশায় অপেক্ষায় কেউ যদি এগিয়ে আসে! সেই খাবার বহন করবে ক্ষুধার্ত বাচ্চার জন্য৷
আমরা অনেই 1983 সালের অভাব দেখি নি৷ দেখিনি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন দুর্ভোগ, দুরবস্থা৷ 1947 সালে দেশভাগ দেখি নি৷ দেখিনি হিজরত ও দেশত্যাগ৷ অনেই দেখিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের সংগ্রাম৷ 1974 সালের কথাও জানি না আমরা৷ তবে করোনাকালে সেই সময়ের চালচিত্র অনুভব করছেন অনেকেই৷ উন্নত বিশ্ব আজ অসহায়৷ বেকার হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ৷ তথাকথিত পরাশক্তি আমেরিকার মুখে হাসি উদায় আজ৷ স্পেন ও ইটালির ঘুম উড়ে গেছে আজ৷ গত ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে ৩ এপ্লিল ২০২০ এর চিত্র সম্পন্ন ভিন্ন৷ ব্যাংক স্টক মার্কেট, বীমা, বিমান, পর্যটন শিল্পসহ নানা সেক্টর ও খাত মুখ থুবরে পড়ছে৷ অস্তিকরা তো আল্লাহর গজব বা রহমত বলে করোনার ব্যখ্যা করছে৷ নাস্তিকদের মাথায় হাত! তারাও ইশ্বর, গড়, অদৃশ্য সুপারপাওয়ার বা আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করে নিচ্ছে৷ এক ভাইরাসের কাছে যদি বিশ্ব কপোকাত ও চিৎপটাং হয়ে থাকে এবং যার চরিত্র নিরুপন কঠিন এখনও৷
নাক মুখ ও চোখ দিয়ে করোনা শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে দখলে নিচ্ছে দেহঘড়ি! এর পর থেমে যাচ্ছে জীবনঘড়ির টিক টিক৷ চোখের সামনে লাশের মিছিল৷ অসহায় ডাক্তার৷ অসহায় শাসক৷ অসহায় বিজ্ঞানী৷ অসহায় ট্রাম্প পুটিন৷
লেখাটি শুরু ময়মনসিংহের শহর নিয়ে৷ এই শহরে শিল্প সাহিত্যের সঙ্গে জড়িত আমার প্রিয় কয়েকজন বন্ধু ও ভাই জীবনের ঝুকি নিয়ে সেবা কাজ করছেন৷ অভাবী মানুষের দোয়ারে গোপনে প্রাকাশ্য হাজির হচ্ছেন দিনে রাতে৷ ওইযে যে সম্মানিত মানুষ অভাবের কথা লজ্জায় বলতে পারছেন না তাদেরকে গোপনেই পৌঁছে দিচ্ছেন ভালোবাসার উপহার৷
যারা টাকা দিচ্ছেন এবং যারা শ্রম মেধা দিচ্ছেন সবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও দুআ৷ এই ভাইয়েরা কেউ ভোট ভিক্ষা করে না৷ নেতা হবার সখও দেখি না আমি৷ এমপি মন্ত্রী হয়ে বাচালের মতো কথা বলবে তারও সম্ভাবনা দেখি না আমি৷ কখনও সাহিত্যের টানে লৌহিত্যের তীরে বিকেলে এক কাপ চা ভাগ করে পান করে জীবনের গল্প করে এই ভাইয়েরা৷ কখনও রাতের গভীরে কবিতার আবৃত্তি করে জীবনের ছবি আঁকে৷ মানুষের অকল্যাণের চিন্তা করে না৷
আমিও এইসব চায়ের কাপে চুমু বা চুমুক দিতে হাজির হই৷
গল্প করি৷ দেখি৷ আমি সবার নাম জানি না যারা করোনাকালে সেবাকাজ করছেন তবে কবি শামীম আশরাফ, সংগঠক আলী ইউসুফ ভাই চিত্রশিল্পী রাজন ভাইকে দেখছি দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর রাজি আল্লাহ আনহুর অনুসরণে নাগরিকদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন চাল ডাল চিনি সাবান নিয়ে৷ এই ভাইদের সঙ্গে যারাই আছেন সবার প্রতি আমার অকৃতিম ভালোবাসা ও দুআ৷ যারা তাদে হাতে টাকা দিচ্ছেন নিশ্চিত থাকতে পারেন আপনার টাকা থেকে তারা এক কাপ চাও খাবে না৷ এই ভাইয়েরা অভাবে এক কাপ চা ভাগ করে খায় নিজের টাকায়৷ আর টাকা থাকলে লৌহিত্যে আনন্দ করে নৌকায় নিজের টাকায়৷
আপনারা দেশের আগামী দিনে উজ্বল তারাকা এবং যারা অভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তারা মহৎ৷ তারাই প্রকৃত রুপসী বাংলা ৷ করোনাকালে রুপসী বাংলার মহৎ যারা ময়মনসিংহ শহরে কবি শামীম আশরাফ, সংগঠক আলী ইউসুফ ভাই ও চিত্রশিল্পী রাজন ভাইদের সেবা কাজ।



ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট
3/4/2020
4:10