নারায়ণগঞ্জের কয়েক লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার অন্যতম কেন্দ্র ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল) জরুরি বিভাগের সেবা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকেই ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে সেবা নিতে আসা শত শত রোগীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
এদিকে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, সারা শহরময় যানবাহন বা রিকশা চলাচলও বন্ধ থাকায় ওই হাসপাতাল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরত্বে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে পায়ে হেঁটে গিয়েছিলেন রোগীরা।
হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত- এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানিয়েছেন, বন্দরে করোনায় মৃত্যু হওয়া নারীর চিকিৎসা করা ডাক্তার, নার্স ও ওয়ার্ডবয়সহ কয়েকজনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। তাই জরুরি বিভাগ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে। ২-৪ দিনের মধ্যে আবার জরুরি বিভাগ খুলে দেয়া হবে।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, আমি সবার সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত না নিয়ে হাসপাতাল বন্ধ করতে পারি না। সবার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে তার পর বন্ধ করেছি। তবে জরুরি বিভাগ ছাড়া হাসপাতালের অন্যান্য সব সেবা চালু থাকবে বলে সিভিল সার্জন জানান।
অন্যদিকে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আসাদুজ্জামান বলেন, ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের রসুলবাগ এলাকায় এক নারী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার আগে ওই নারীকে ১০০ শয্যা হাসপাতালে আনা হয় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য।
এ ছাড়া পরবর্তী সময় আরও দুজন আক্রান্ত রোগী রোগ গোপন করে ১০০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এসব কারণে জরুরি বিভাগের কয়েকজনকে এর আগেই হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়। তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
সোমবার পাওয়া রিপোর্টে নার্স ও ওয়ার্ডবয়সহ তিনজনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। ওই তিনজনকে ইতিমধ্যে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সে কারণেই আপাতত জরুরি বিভাগ বন্ধ রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার জরুরি বিভাগ জীবাণুমুক্ত করা হবে।
এদিকে এ ব্যাপারে চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। তারা জানান, বন্দরে করোনা আক্রান্ত নারী মারা যায়। তবে গত ২ এপ্রিল জানা গিয়েছিল তার করোনাভাইরাস পজিটিভ। এর ৪-৫ দিন আগে তিনি জেনারেল হাসপাতালে এসেছিলেন।
৩ এপ্রিল ওই নারীকে চিকিৎসা দেয়া ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ ১০ জনকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। তা হলে গত ৪ দিন বা ওই নারী চিকিৎসা নিতে আসা সময় ধরলে গত ৮ দিনে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা অবশ্যই ছিল। শুধু এই পরিচ্ছন্ন করার সিদ্ধান্ত নিতেই সিভিল সার্জন ৪ দিন সময় লাগালেন।