১৩ই এপ্রিল, সোমবার, ২০২০
দ্যা ভয়েস অফ ঢাকা প্রতিবেন ডেস্কঃ বৃটেনজুড়ে থাকা লাখ লাখ বাংলাদেশির জীবনে এমন কঠিন সময় অতীতে কখনও আসেনি। প্রায় অর্ধশত বছর ধরে লন্ডনে তাদের বাস। তারা ডুয়েল সিটিজেন। দুই দেশের সমাজ ও রাজনীতিতে বৃটিশ-বাংলাদেশিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বন্যা কিংবা মানবতার যে কোনো সঙ্কটে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত বৃটিশরা ঝাঁপিয়ে পড়েন সর্বোতভাবে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনার এই কঠিন সময়ে আজ তারা বড় বিপদে। ঘরবন্দি, কর্মহীন অবস্থায় জীবন কাটছে চরম অনিশ্চয়তায়। তুলনামূলক প্রশান্তিময় জীবনে আচমকা জীবন-ঝুঁকিতে তারা!
দৃশ্যত বাংলাদেশের তুলনায় বৃটেনের সঙ্কট শতগুন বেশি।
দেশটিতে এ পর্যন্ত ৮৪ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত। মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৭শ ৩৭ জনের প্রাণ গেছে। লন্ডন মিশনের হিসাব মতে, কেবল হাসপাতালেই ৪৫ বাংলাদেশির প্রাণ কেড়েছে প্রাণঘাতি করোনা, কোভিড-১৯। বাসা বাড়িতে কিংবা ওল্ডহোমে আগে থেকে অন্য রোগ-শোকে ভোগে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের হিসাব বাদ। করোনায় খোদ বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী আক্রান্ত। আইসিইউতে ৩০ ঘন্টা জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে তাকে। বৃটিশ রাজপরিবারও স্বস্তিতে নেই। করোনা আক্রান্ত প্রিন্স অবশ্য সেরে ওঠছেন। পরিস্থিতি এমন কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কারণে এখন আর কেউই ঝুঁকির বাইরে নন। এই যখন অবস্থা, তখনও দেশে থাকা স্বজনদের নিয়মিত খোঁজ রাখছেন বৃটেনের বাংলাদেশিরা। তারা জানার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের সরকারী ভাষ্য আর বাস্তবতার মধ্যে কোনো ফারাক বা গ্যাপ আছে কি? দেশে বেড়াতে এসে নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধের কারণে অাটকেপড়া দুই হাজারের বেশি বৃটিশ বাংলাদেশির ফেরা নিয়েও উদ্বিগ্ন কমিউনিটি! দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা বৃটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েথ অফিসে যোগাযোগ করছেন। মনের শ্বান্তনার জন্য খোঁজ নিচ্ছেন লন্ডনস্থ বাংলাদেশ মিশনেও। আবদুর রহমান নামের মৌলভীবাজারের এক বয়োজ্যেষ্ঠ লন্ডন প্রবাসী (পিতার কর্মসূত্রে তার পুরো পরিবার দেশটির নাগরিকত্ব পেয়েছে) শনিবার মানবজমিন প্রতিবেদককে ফোন করেন পূর্ব পরিচয়ের জেরে। দেশে তার পরিবারের কেউই থাকেন না। যারা আছেন হয় স্বজন না হয় আত্মীয়। তাদের খোঁজ খবর নিয়মিত নিচ্ছেন জানিয়ে মিস্টার রহমান বলেন, বৃটেনের মত উন্নত রাষ্ট্র যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদশ নিয়ে আমরা খুবই দুশ্চিন্তায়, আদতে কি করোনা কমিউনিটিতে ছড়ায়নি, নাকী টেস্ট কম হওয়ার কারণে শনাক্তের হার কম। লন্ডনে থাকা সাজু বখতের সমস্ত চিন্তা তার বয়স্ক মাকে ঘিরে। মাকে দেখতে গত ৪ঠা এপ্রিল দেশে আসার টিকেট কনফার্ম করেছিলেন। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তা বাতিল হয়ে গেছে। সাজু ওই প্রতিবেদককে বলেন, অন্যদের নিয়েও ভাবি, তবে মাকে নিয়েই বেশি টেনশন হয়। জানি না কি হবে! মা গ্রামে আছেন, বাড়ির-পরিবারের অন্যরা সতর্ক আছেন। এখন বাকীটা আল্লাহ ভরসা। স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডনে যাওয়া তাহমিনা বেগম স্বামী সূত্রে বৃটেনের নাগরিক। মৌলভীবাজার সদরের দুর্লভপুরে তার পৈতৃক নিবাস। বাবা আমিরাত প্রবাসী। মা এবং পরিবারের অন্যরা এখনও দেশে। অবশ্য তাহমিনার চাচা আবদুল মুকিত পরিবার নিয়ে লন্ডনে বাস করছেন বহু বছর ধরে করেন। কিন্তু চাচা-ভাতিজির দেখা নেই আজ মাসের ওপরে। স্কাইপ ও হোয়ার্টসআপে ভিডিও কলে কথা হয়, দেখা হয়। মিজ তাহমিনার এখনকার সব চিন্তা তার দূবাই প্রবাসী বাবাকে ঘিরে। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, বাড়িতে না হয় মায়ের সঙ্গে সবাই আছেন। বাবা তো একা, আমাদের সবার থেকে অনেক দূরে। তাছাড়া তার বয়স হয়েছে তো। শুনেছি তার অফিস করোনার কারণে মরুভূমিতে শিফট করেছে। জানি না, তিনি কতটা নিরাপদে আছেন?
বাংলাদেশে আটকা বৃটেনের নাগরিকদের জন্য বৃটিশ এয়ারওয়েজের দু’টি বিশেষ ফ্লাইট আসছে বলে জানা গেছে। আগামী ক’দিনের মধ্যে প্রায় ৬ শতাধিক নাগরিককে বহনে সক্ষম দুটি বোয়িং উড়োজাহাজ ঢাকায় পাঠাচ্ছে বৃটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস। ঢাকাস্থ বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন এক জরুরি ভিডিও বার্তা স্পেশাল ফ্লাইট প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন। আটকে পড়া নাগরিকদের উদ্দেশ্যে প্রচারিত সর্বশেষ বার্তায় তিনি বাংলাদেশজুড়ে থাকা বৃটিশ নাগরিকদের ঢাকায় ফেরার পথে সহযোগিতায় তিনি সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের প্রতি অনুরোধ করেছেন। এদিকে গত ২রা এপ্রিল প্রচারিত পৃথক বার্তায় বৃটিশ দূত আটকে পড়া নাগরিকদেন উদ্দেশ্য বলেন, আপনারা অনেকে জেনে থাকবেন বিভিন্ন দেশে আটকা নাগরিকদের বৃটেনে ফিরিয়ে নিতে ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস বিশ্বব্যাপী বেশ বড় আকারের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ফিরিয়ে আনার ওই কার্যক্রমে সেই সব এলাকাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে যেখানে বৃটেনের নাগরিকদের বেশ বড় একটি সংখ্যা আটকা পড়েছেন অথবা আটকা বৃটিশ নাগরিকরা সেখানে চরম ঝুঁকিতে। তাদের বৃটেনে দ্রুত ফেরা ছাড়া সুরক্ষার উপায়ই নেই। ঢাকাস্থ বৃটিশ হাইকমিশন বাংলাদেশে আকটা নাগরিকেদে বিষয়ে লন্ডনের দৃষ্টি আকর্ষন করছে যেনো, নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশে আটকে পড়া ব্রিটিশ নাগরিকদের দ্রুত বৃটেনে ফেরানোর উদ্যোগে আরও মনোযোগী হন। বিষয়গুলো যেন তাদের পরিকল্পনায় প্রতিফলিত হয়।
আমার আলোচনা করা চতুর্থ বিষয়টি আগে উল্লেখিত বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আপনাদের অনুরোধ করছি, সব সময় আমাদের ট্র্যাভেল এ্যাডভাইসে চোখ রাখবেন। এই ট্র্যাভেল এ্যাডভাইস আপনি আমাদের ওয়েবসাইটে পাবেন এবং একই সঙ্গে আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করবেন। রুটিন কিংবা স্পেশাল ফ্লাইট ঠিক হলে আমরা আপনাদের দ্রুত জানাবো ওদিকে দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশি কিছু স্টুডেন্ট এবং বেড়াতে যাওয়া ক’জন বাংলাদশি লন্ডনে আটকা পড়েছেন। নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধে তারা দেশে ফিরতে পারছেন না। ঢাকাগামী কোনো বিশেষ ফ্লাইটে তাদের ফেরানোর সূযোগ খোঁজা হচ্ছে।