সচরাচর চোখের আড়ালেই থাকে বড় সংখ্যাক জনগোষ্ঠীর কাজ। কিন্তু অর্থনীতিতে তাদের অবদান কম না। সেইসব খাতে নিয়োজিত কোটি মানুষের এখন কষ্টের শেষ নেই। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, হোটেল বয়, বিনোদন কেন্দ্রে কর্মরত, রিক্সা চালক, কাজের বুয়াসহ এসব খাতে নিয়োজিত মানুষদের দুর্ভোগ চরমে। আয় নেই, সহায়তাও তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
দেশে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পে নিয়োজিত ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এসব মানুষরা নানান পণ্য তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করেন। রিক্সা এবং ভ্যান চালিয়ে যেসব শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করে তাদের আয় নেই। মানুষ বাইরে বের হয় না, তাই আয়ও বন্ধ। বাসা-বাড়িতে কাজ করে যারা জীবন নির্বাহ করেন, তাদেরও দুর্দশার শেষ নেই।
সারাদেশে বন্ধ হয়ে গেছে হোটেল রেস্তোরাঁ। এসব জায়গায় যারা কর্মরত ছিল তাদের আয়ের পথও রুদ্ধ। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে তাদের এখন আয়ের পথ বন্ধ। ফলে দিন পার করাই এখন কঠিন। হঠাৎ করে বড় সংখ্যাক মানুষ কর্মচ্যুত হওয়ায় তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে খাবার পৌঁছানো প্রয়োজন।
জানা গেছে, শুধু ঢাকা মহানগরীতে দোকানের সংখ্যা আড়াই লাখ। প্রতিটি দোকানে কমপক্ষে তিনজন করে কর্মচারী নিয়োজিত থাকলে সংখ্যা দাঁড়ায় সাড়ে সাত লাখ। সারা দেশে দোকানের সংখ্যা ৩০ লাখ। করোনা ভাইরাস সংক্রমনের ভয়ে গেল ২৫ মার্চে দেশের সব দোকান বন্ধ হয়ে গেলে বিপুল সংখ্যাক শ্রমিকের আয়ের পথও বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ করে বন্ধ করায়, মার্চ মাসের বেতনও পরিশোধ করেনি মালিকপক্ষ। ফলে তীব্র হয়েছে দোকান শ্রমিকদের কষ্ট। সহায়তার বাইরে রয়েছে এসব শ্রমিক।
কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ায় দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে বিরাট সংখ্যাক মানুষ। দেশের দারিদ্র্যরে হার ২২ শতাংশ ছিল, যা দ্রুত গতিতে উন্নতি হয়। কিন্তু দশ বছরের অর্জন কয়েকদিনেই শেষ। এখন দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশের বেশি। তবে, অর্থনীতিবিদদের দাবি, করোনা সংকট শেষ হবার পর সরকারের হস্তক্ষেপে এসব মানুষদের যদি কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসা যায়, তবে দারিদ্র্য কমে যাবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা, পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক, আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, গার্মেন্টস খাতে কর্মরত আছেন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষ। তারচেয়েও বড় সংখ্যাক মানুষ কাজ করে এসএমই খাতে, যার সংখ্যা ৯০ লাখ। এছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমশক্তি ১৩ থেকে ১৪ লাখ। স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হলে শ্রমিকদের এখনও সহায়তা দেয়া দরকার। পরবর্তীতে কাজে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে কর্মপন্থা হাতে নিতে হবে।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, বিরাট সংখ্যাক মানুষের এই মুহুর্তে খাবারের সংস্থান করা প্রয়োজন। মানুষ খাবারের জন্য রাস্তায় নেমে গেছে। তিনি বলেন, দেশে খাদ্যের অভাব নেই। শুধু কৃষক পর্যায় থেকে এনে এইসব মানুষদের মধ্যে বন্টন করতে হবে।