চামড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় তিনকোটি বর্গফুট প্রক্রিয়াজাত চামড়া ট্যানারি গুলোতে আটকে পড়েছে। এই খাতের উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা এতে তাদের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া এই খাতের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ অস্থায়ী। এসব শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ ট্যানার অ্যাসোশিয়েশনের দাবি আপতকালীন শ্রমিকদের সুরক্ষা দিতে সরকারের ঘোষাণা অনুসারে সহজ শর্তে প্রণোদনা টাকা যেন তারা পায় সেটা নিশ্চিত করা।
ট্যানারি শিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবেরর কারণে দেশের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের ট্যানারিগুলোতে প্রায় ৩০০ কন্টেইনার বা তিন কোটি বর্গফুট প্রস্তত করা চামড়া অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। এর ফলে গত তিন মাসে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)। এ ছাড়া এই খাতের অনেক শ্রমিক চাকরি হারানো আশংকা করছেন।
জানা যায়, দেশ থেকে বছরে যত চামড়া রপ্তানি হয়; এর ৬০ শতাংশই যায় চীনে। এবারও জানুয়ারিতে চীনের নববর্ষের ছুটি শেষে দেশটিতে এক কোটি বর্গফুট প্রস্ততকৃত চামড়া পাঠানোর আদেশ ছিল দেশের ট্যানারিগুলোর কাছে। কিন্তু সেখানে হানা দেয় করোনাভাইরাস। আটকে যায় সেই রপ্তানি। তবে শুধু চীন নয়; এর পরের দুই মাসে ইতালি, স্পেন ও জাপানসহ বিশ্বের সব গন্তব্যে প্রস্তুতকৃত চামড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাড়তে থাকে অবিকৃত চামড়ার পরিমাণ। তা এখন তা পৌঁছে গেছে তিন কোটি বর্গফুটে।
বিটিএর সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্ল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের চামড়ার প্রায় ৩০০ কন্টেইনার অবিক্রিত পড়ে আছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। হিসেব করে দেখা যায়, মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সামনে যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে সেটি ভয়াবহ রূপ নেবে।
সাক্ষাওয়া উল্ল্যাহ আরো বলেন, শুধু রপ্তানির জন্য নয়; দেশের বাজারের জন্য তৈরি হওয়া জুতা বা চামড়াজাত পণ্যের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করে দেশের ট্যানারিগুলো। কোভিড-১৯ এর কারণে দেশের অর্থনীতির আকাল অবস্থায় সেই ব্যবসাও এখন বন্ধ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ২৫ মার্চ থেকে বন্ধ আছে সাভার শিল্পনগরী ট্যানারিগুলো। যেখানে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে।
সমতা লেদারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের শ্রমিকের বেতন-ভাতা নিয়ে চিন্তিত। আগামী কয়েক মাস যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আমাদের আশঙ্কা শ্রমিকদের বড় একটি শ্রেণি চাকরি হারাতে পারে। স্থায়ী শ্রমিকরা কোনোভাবে টিকে গেলেও অস্থায়ীদের বড় একটি সংখ্যা চাকরি হারাবে। কারণ উদ্যোক্তারা রপ্তানি করতে না পারলে বেতন-ভাতা ও অন্য সেবা খাতে চার্জ পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের কাছে আবেদন সরকারের ঘোষিত শ্রমিকদের জন্য সহজশর্তে প্রণোদনার প্যাকেজ আমাদের শ্রমিকরাও যেন পায়।
বিটিএর সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা আশা করছি ব্যাংক আমাদের সহজ শর্তে প্রণোদনার টাকা দেবেন। আমরা যেন আগামী কোরবানি মৌসুমে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করতে পারি। দেশ থেকে যে চামড়া রপ্তানি হয়, এর ৬০ শতাংশই আসে কোরবানিতে। তিনি বলেন, এই সময় প্রায় ৭০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। ৪০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হয় চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ রাসায়নিক ও কাঁচামাল সংগ্রহে।